পারমিতার চিঠি (মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট)

মুক্তিযোদ্ধা (ডিসেম্বর ২০১২)

রীতা রায় মিঠু
  • ২৩
  • ১০
পারমিতা,

কেমন আছিস সোনা! কতদিন হয়ে গেল তোর সাথে কথা হয়নি। সেই যে দেশে গেলি, আর ফেরার নাম করিস না। এদিকে আমি গলা শুকিয়ে মরি। দুই দিন পর পর দাদাকে ফোন করি আর তোকে ইচ্ছেমত বকি। দাদা অবশ্য বলেছে, মাসীমার শরীর খারাপের কথা। মাসীমার অসুস্থতার খবর পেয়ে তোর উপর থেকে অভিমান ঝেড়ে ফেলে দিয়েছি। তুই কবে নাগাদ ফিরে আসবি বলতো! দাদা আন্দাজ করছেন, আগামী সপ্তাহের ভেতর চলে আসবি। ভালোই হলো, তুই ফিরে এলে তোর সাথে ভীষণ জরুরী আলাপ আছে। মানস যাচ্ছে নিউইয়র্কে, সায়েন্স ফেয়ারে ওদের টিম এখানে রিজিওন্যালে ফার্স্ট হয়েছে, পরের ইভেন্ট নিউইয়র্কে। ওদের কলেজ থেকেই পাঠাচ্ছে, একফাঁকে তোর ওখানে ঘুরে আসতে বলবো।

আমার এখানে সময় মোটামুটি ভালই কাটছে। যতক্ষণ কাজে থাকি, খারাপ লাগেনা। সুপারসেন্টারে চাকুরী তো, কত রকমের মানুষজনের আসা যাওয়া দেখি, ভালোই লাগে। এখানে প্রেসিডেন্ট ইলেকশানের সময় কী কান্ড! আমাদের এখান থেকে প্রায় ২৭০ মাইল দূরে একটি কলেজ আছে। ওবামা জয়ী হয়েছে সংবাদ প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথে ঐ কলেজে ভাংচুর শুরু হয়েছে, ওখানে নাকি সাদাদের দাপট বেশী। সকলেই ধরে নিয়েছে কলেজের কালো ছেলেমেয়েরা ওবামাকে ভোট দিয়েছে। হা হা হা! এই ঘটনায় আমার খুব হাসি পেয়েছে। এখানেও দেখছি আমার দেশের হাওয়া লাগতে শুরু করেছে। কী অবস্থা!

ভালো কথা, দেশে এখন যুদ্ধপরাধীদের বিচার চলছে, পত্রিকা পড়ে কতটুকু আর জানা যায়, তুই ফিরে এলে এই ব্যাপারে বিস্তারিত শুনবো। এবারের বিজয় দিবসের আগেই নাকি যুদ্ধপরাধীদের বিচারের রায় হয়ে যাবে। তার মানে, এবারের বিজয় দিবস বিশেষভাবে তাৎপর্য্যপূর্ণ হবে। আমাদের এখানে এবার বিজয় দিবস উদযাপন হবে খুব ঘটা করে। দু’জন মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধণা দেয়া হবে। আমি কখনও কোন মুক্তিযোদ্ধাকে সামনে থেকে দেখিনি। খুব এক্সাইটেড হয়ে আছি। বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে দুই মুক্তিযোদ্ধা বক্তৃতা করবেন, এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের জানার সুবিধার্থে উনারা নিশ্চয়ই যুদ্ধের বর্ণনাও দিবেন, ভাবতেই ভালো লাগছে। বাদ দে, কথা শুরু করলে আমার আর হুঁশ থাকেনা। তুই আয়, তারপর কথা হবে।
আশা করি মাসীমা খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। আমি আবার ফোন করবো। তোর চিঠির উত্তরের অপেক্ষায় থাকলাম।

মানসী

প্রিয় মানসী

ফিরে এসেছি গত পরশু। দুই দিন একটানা ঘুমিয়ে আজকে অনেকটাই ফ্রেশ লাগছে। নিউইয়র্কে খুব শীত পড়ে গেছে দেখছি, অথচ বাংলাদেশে এখনও ফ্যান ছেড়ে ঘুমায় সবাই। বাড়ী ফিরতেই দেখি, আমার টেবিলে তোর দু’খানা চিঠি পড়ে আছে। খাম ছিঁড়তে যাব, অমনি তোর দাদা হেসে দিয়েছে। জিজ্ঞেস করেছি, “ হাসছো কেন?” বলে, “ তোমাদের দুই বান্ধবীর এই চিঠি চালাচালি দেখে হাসছি। ফোনেই তো কথা বলো, তারপরেও চিঠি লেখার এত ধৈর্য্য থাকে কী করে”? আমিও হেসে ফেলেছি, বললাম, “ চিঠি তো শখ করে লিখি। কলেজে থাকতে দুই বান্ধবী ঠিক করেছিলাম, পাশাপাশি বাড়ীতে থাকলেও আমরা মাসে একটি করে চিঠি লিখবো, যেখানে নিজেদের না-বলা কথাগুলো থাকবে। ফোনে কথা বলি ঠিকই, কিন্তু ফোনের আলাপ আর চিঠির আলাপে অনেক পার্থক্য। ফোনে কথা বলার সময় দুজনেই স্বামীর নামে গিবৎ গেয়ে যাই, কোন রেকর্ড থাকেনা, আর চিঠিতে স্বামীদের প্রশস্তি গেয়ে যাই, রেকর্ড হয়ে থাকে, কোনদিন যদি ডিভোর্স ফাইল স্যুট করো, আমরা কোর্টে গিয়ে আমাদের চিঠি দেখিয়ে বলতে পারবো, তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ এনেছো”। আমার উদ্ভট কথা শুনে তোর দাদা হেসে ফেলেছে।

আচ্ছা কী এমন জরুরী কথা আছে তোর? কোন হিন্টস দিলিনা তো। মানস নিউইয়র্কে আসবে বলেছিস, এতো খুবই খুশীর খবর। তুইও চলে আয়। অনেক মজা হবে। দেশের গল্প করা যাবে, দেশে এখন সবই পালটে যাচ্ছে, থেকে এলাম দুই মাস, অনেক কিছুই পালটে গেছে। জামাতীরা পর্যন্ত পুলিশকে পেটায়, বুঝে দ্যাখ। এবছরের বিজয় দিবস কিভাবে উদযাপিত হবে, সেই সম্পর্কে কিছু শুনিনি। দুই একজন সাংবাদিক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তারা দেখি খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত দেশের পরিস্থিতি নিয়ে।

তোদের ওখানে এবার বিজয় দিবস ঘটা করে পালিত হবে জেনে খুশী হলাম। নিউইয়র্কে তো আওয়ামীলীগ, বিএনপি আলাদা আলাদা করে বিজয় দিবস উদযাপন করবে। আমি অবশ্য সব দলের অনুষ্ঠানে যাই। ভালো লাগে। তুই মুক্তিযোদ্ধা দেখিস নি লিখেছিস, দেখবি কী করে, নকল মুক্তিযোদ্ধাদের দাপটে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা আড়ালে থাকে। এইজন্যই তাঁদের দেখা যায় না। আমি অবশ্য প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে দেখেছি, অনেক কাছে থেকে। তিনি আমার বাবা। আমার চোখে আমার বাবাই সর্বশ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা।। অবশ্য মুক্তিযুদ্ধের সময় বাবা হাতে অস্ত্র নেন নি ঠিকই, তবে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিতেন, টাকা-পয়সা দিতেন, সুযোগ পেলেই কারো না কারো হাত দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ওষুধ পাঠাতেন। আমাদের তো নিজেদের ফার্মেসী ছিল, তাই ওষুধ সাপ্লাই করতে কোন কার্পণ্য করেন নি। অবশ্য মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগীতা করার চেষ্টা করেছেন বলে বাবাকে মুক্তিযোদ্ধা বলছি না। সারাজীবন উনি মানুষের মঙ্গলের কথা বলেছেন, জীবন-সংগ্রামে হার না মেনে লড়াই করে যাওয়ার কথা শিখিয়েছেন, নারী মুক্তির কথা বলেছেন, শুধু বলেছেন বললে ভুল হবে, উনি নিজে চেষ্টা করে গেছেন অন্যের জীবনে আলো দেখাতে। এই সকল কারণেই বাবাকে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ বলেছি।

আচ্ছা, মুক্তিযোদ্ধা মানে কী? মুক্তির জন্য যে লড়াই করে, সে-ই তো মুক্তিযোদ্ধা। আমার বাবা সেই ছোটবেলা থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন, এখন পর্যন্ত। বাবা ছিলেন বাপ-মায়ের বড় ছেলে, খুবই আদরের। বাবার জন্মের আগে আমার দাদীমার অনেকগুলো ছেলে মেয়ে জন্মেই মারা যায়। এইজন্যই জন্মের পর থেকে বাবা খুব আদরে বড় হচ্ছিলেন, কিনতু উনার বয়স যখন তের, হঠাৎ আমার দাদু মারা যান। তিনটি নাবালক পুত্র নিয়ে উনার মা চোখে অন্ধকার দেখেন। বাবা ছিলেন খুবই মেধাবী, উনার একটাই লক্ষ্য ছিল, জীবনে ডাক্তার হবেন। কিনতু ডাক্তার হওয়া দুরের কথা, বেঁচে থাকার জন্য ঐ বয়সেই তাঁকে জীবনযুদ্ধে নামতে হয়েছে, কেরাণীর চাকুরী পাওয়ার আশায় টাইপিং শেখার স্কুলে ভর্তি হয়ে যান। টাইপিং শিখে শর্টহ্যান্ডও শিখে ফেলেন। এরই ফাঁকে এন্ট্র্যান্স পাশ করে একটি চাকুরী জুটিয়ে ফেলেন। ছোট ছোট দুইটি ভাই আর বিধবা মায়ের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েই সওদাগরী অফিসে কাজ করে যাচ্ছিলেন। নাইট কলেজে ভর্তি হয়ে দিনে কাজ, রাতে পড়া পদ্ধতিতে এক সময় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাও পাশ করেন। তবে ডাক্তারী পড়ার সুযোগ পান নি। তাই বলে জীবনের যুদ্ধ থামাননি। নিজে ডাক্তারী না পড়তে পারলেও ছোট ভাইকে কিনতু ডাক্তারী পড়িয়েছেন। তারপরতো আমার মায়ের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর আমার মায়ের বয়স ছিল মাত্রই পনের, ক্লাস নাইনে পড়ে। বিয়ের পরেই নাকি আমার বাবা আমার মা’কে বলেছিল, পড়া বন্ধ করা যাবে না, এনট্র্যান্স পাশ করতেই হবে। টানাটানির সংসারে বড় বোনের এক ছেলেকে নিয়ে আসেন। আমার সেই ভাইটি লেখাপড়ায় অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। আমার বাবার কাছেই থেকে যান এবং ম্যাট্রিকে ফার্স্ট স্ট্যান্ড করেন। পরবর্তীতে দাদা টপ রেজাল্ট করে এম এ পাশ করেন। দাদা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন। দাদার সাফল্যে বাবা তাঁর দিদির আরেক ছেলেকে নিয়ে আসেন। এই দাদা অনেক চালাক ছিল, কিন্তু পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী ছিল না। তারপরেও বাবার কাছে রেখে এই দাদাটিকে এইচ এস সি পাশ করানো হয়। পরে এই দাদাটিও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করার যোগ্যতা অর্জন করেন।

বাবার কোন ব্যাপারটি আমার বেশী ভালো লাগে বলতো! বাবা নারীর মুক্তি এবং স্বাধীনভাবে চলাফেরাকে আগাগোড়া সমর্থণ করেন। আমার মা কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্কুল ফাইন্যাল পরীক্ষা ভালো ভাবেই পাশ করেন। মা ম্যাট্রিক পাশ করার সাথে সাথে কাছাকাছি একটি স্কুলে বিনে বেতনের চাকুরীতে মা’কে অনেকটাই জোর করে ঢুকিয়ে দেন। মা বোধ হয় একটু গাঁইগুঁই করেছিল, বাবা সোজা বলেছিলেন, “ মেয়েদের মুক্তি আসবে কর্মে। শুধু ঘরে নয়, বাইরেও কাজ করতে হবে। মেয়েদের চোখ ফোটা প্রয়োজন। ঘরে থাকলে প্রতিবেশীদের সাথে গুজুর গুজুর করে সময় কাটবে, এটা খুব খারাপ। তাছাড়া তুমি শিক্ষক, এই পরিচয় তোমাকে অনেক আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে, তোমার ছেলেমেয়েরা তোমাকে নিয়ে গর্ব করবে”। বাবার কথা ঠিক, আমরা আমাদের মা’কে নিয়ে দারুণ গর্ব করি।

তারপরে বাবা কী করেছে শোন, গ্রামের বাড়ী থেকে উনার কাজিনদের শহরে নিয়ে এসে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। উনার তত্বাবধানে থেকে আমার চার পিসী ম্যাট্রিক পাশ করে, উনাদের ভাল ঘরে-বরে বিয়ে হয়ে যায়। এরপর তো শুরু হয়ে গেল মুক্তিযুদ্ধ। আগেই তো বলেছি, উনি কীভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগীতা করেছিলেন। শেষের দিকে বাবার অনেক শত্রু তৈরী হয়, আমরা বাড়ী-ঘর ছেড়ে অন্যখানে চলে যাই। বাবা কিন্তু আমাদের নিয়ে দেশ ছাড়েন নি, কলিকাতাতেও যান নি। এক সময় শান্তিকমিটির চেয়ারম্যানের চেলা চামুন্ডারা আমাদের বাড়ী ঘরে আগুন লাগিয়ে পুড়ে দেয়। স্বাধীনতার পরে আমার বাবা একেবারে শূণ্য থেকে শুরু করেন। যে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছিলেন, তারা একদিন আমাদের বাড়ীতে ফিরে আসে। আমার বাবা কে নিয়ে বংগবন্ধুর কাছে যেতে চেয়েছিল ওরা। বাবা যান নি, বলেছিলেন, “ দেশের জন্য তোমাদের মত সোনার টুকরারা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলে, জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করেছো, পাকিস্তাণী সেনাবাহিণীর হাত থেকে নিজের দেশকে ছিনিয়ে এনেছো, তোমরাই একমাত্র বঙ্গবন্ধুর সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পার। আমি তোমাদের সাহায্য করতে চেয়েছি, যুদ্ধ তো করিনি। যতটুকু করেছি নিজের দেশের জন্য করেছি, আমার ছেলেদের জন্য করেছি, স্বাধীন দেশ পেয়েছি, এই তো আমার কাজের পুরস্কার।” আমার স্পষ্ট মনে আছে, বাবা প্রায়ই বলতেন, “দেশ স্বাধীন হয়েছে, এখন আসল পরীক্ষার শুরু হয়েছে। স্বাধীনতা অর্জন কঠিন, কিনতু স্বাধীনতা ধরে রাখা আরও অনেক বেশী কঠিন”। যেদিন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়, সেদিনের পর থেকে আজ পর্যন্ত বাবা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আর একটি কথাও বলেননি। শুধু নীরবে মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন।

মানসী, আমার বাবা যা বলতেন, তা পুরোপুরি বিশ্বাস করতেন এবং নিজের জীবনে তা চর্চ্চা করতেন। এই পর্যন্ত আমার বাবা নিজের তত্বাবধানে রেখে আটজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা পার করিয়ে এনেছেন, তাদের প্রত্যেকে আজ জীবনে প্রতিষ্ঠিত। এই আটজনের মধ্যে কিনতু উনার ছেলেমেয়েরা পড়ে না। এদের একজন হচ্ছে বাবার ফার্মেসীর কম্পাউন্ডারের ছেলে, আরেকজন হচ্ছে আমার মায়ের স্কুলের দারোয়ানের মেয়ে। বাকী ছয়জন গরীব আত্মীয়ের ছেলেমেয়ে।

বঙ্গবন্ধুর জীবনের সাথে আমার বাবার জীবনের একটি মিল আছে। বঙ্গবন্ধু যেমন নিজ স্বার্থ চিন্তা না করে দেশের স্বার্থ দেখেছেন, জনগনের দুঃখ-দূর্দশা নিয়ে ভেবেছেন, আমার বাবাও নিজে এতটুকুও বিলাস করেননি, উনার সাধ্যে যতটুকু কুলিয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশী কাজ করেছেন অন্যের জীবনে আলো জ্বালানোর জন্য। বঙ্গবন্ধুকে যেমন তাঁর নিজের দেশের লোকেরা হত্যা করেছে, আমার বাবাকে কেউ হত্যা না করলেও নিজের আত্মীয়দের অনেকেই বাবাকে ত্যাগ করেছে। যাদের জন্য বাবা এত ভাবতেন, তারাই বড় হয়ে বাবাকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠী দেখিয়েছে। আমার বাবা অবশ্য কারো উপর রাগ করেন না, শুধু বলেন, “ আমার যতটুকু করার ছিল, করার চেষ্টা করেছি। কিছুই বিফলে যায়নি, আমাকে পছন্দ না করলেও ক্ষতি নেই, মানুষের কাছে আমার নামে জয়ধ্বনি না দিলেই বা কী আসে যায়, ওরা জীবনে আলোর মুখ দেখেছে, এটাই আমার শান্তি। পড়া্লেখা না শিখালে এরা তো হতে পারতো চোর, গুন্ডা বা কালোবাজারী। সেটা তো হতে দেইনি”।

উনি আমাদের ভাইবোন সবাইকে একসাথে ডেকে একটি উপদেশ বা অনুরোধ করেছিলেন, “তোমাদের কাছে আমার একটিই আর্জি আছে, তোমরা হিল্লি দিল্লী যেখানেই থাকবে, এই গরীব দেশটির কথা ভুলে যেওনা। শেকড়ের সাথে বন্ধন ছিঁড়ো না, আমি বা তোমাদের মা যখন থাকবো না, আমাদের অসমাপ্ত কাজ তোমরা করবে। কাউকে গাড়ী বাড়ী উপহার দিতে হবেনা, সেই টাকায় দশটি গরীব পরিবারের অন্নসংস্থানের ব্যবস্থা করো, এতে করে দেশের উপকার হবে, তোমাদেরও মঙ্গল হবে। যতই পোলাও-কোর্মা দিয়ে প্লেট সাজিয়ে খেতে বসো, তোমার আশপাশে যদি কাউকে লোভার্ত চোখে তোমার প্লেটের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখো, সেই সুস্বাদু পোলাও কোর্মা তোমার কাছে বিষবৎ মনে হবে। তার চেয়ে সকলকে সাথে নিয়ে ডাল-ভাত খেয়ো, অনেক আনন্দ পাবে। আমি বলছি আমার দৃষ্টিকোণ থেকে, মানতেই হবে এমন কোন কথা নেই। মানতে পারলে সকলের জন্যই মঙ্গল, তোমার মানব জনম সার্থক হবে, ঈশ্বরও খুশী হবেন”।

বাবার বর্তমান বয়স ৮৫ বছর। এখনও বুক চিতিয়ে হাঁটেন, বাইরে বের হওয়ার সময় হাতে লাঠি নিতে বললে হুংকার দেন, বলেন, আমি হইলাম রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের দেশের লোক। সারাটা জীবন কারো উপর নির্ভর কর্রিনি, এখন শেষ বয়সে এসে একটা লাঠির উপর ভর দিতে হবে আমাকে! আমার জীবন তো শেষ করে এনেছি, আর কী! লাঠির উপর ভর দিয়ে হাঁটার আগেই আমি টুপ করে চোখ বুজে ফেলবো”।

মানসী, কত আগড়ম বাগড়ম কথা বলে ফেললাম। তবে খারাপ লাগছেনা, নিজের কথা তো কিছু বলিনি, একজন মুক্তিযোদ্ধার গল্প বললাম, গল্পটি বলতে গিয়ে গর্বে বুকটা ভরে গেছে রে। এমন মহৎপ্রাণ মানুষের সন্তান আমি, জানিনা, বাবার আদর্শকে কতটুকু এগিয়ে নিতে পারবো। সামনের মাসে বাবার জন্মদিন, বাবাকে এ’বছর অন্যরকম উপহার দেয়ার কথা ভাবছি। এ’বছরই যেহেতু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হতে যাচ্ছে, এই জন্মদিনেই বরং সোনার জলে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ সার্টিফিকেট তৈরী করিয়ে বাবাকে উপহার দেই! বাবাকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিতে চাই। আইডিয়া কেমন, আমাকে জানাবি।

ভালো থাকিস মানসী। কবীর ভাইয়ের দিকে খেয়াল রাখিস। মানসের সাথে চলে আসিস, তোর অপেক্ষায় থাকবো। তাপসী মা’কে আমার অনেক আদর। ভালো কথা, দুই মুক্তিযোদ্ধাকে আমার তরফ থেকে তাজা গোলাপের মালা দিস, সাথে আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

পারমিতা

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এফ, আই , জুয়েল # ধীরে ধীরে লেখার হাত শক্তিশালী হচ্ছে । লেখার ষ্টাইলও অনেক সুন্দর । ভাবনা ও এর বিকাশ অনেক চমৎকার । সবমিলিয়ে গল্পটা একটু অন্যরকম ভালো লেগেছে । লেখিকাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ।।
মোঃ আক্তারুজ্জামান পরিপাটি লেখা, খুব সুন্দর ভাবনার ফসল| শুরুটা, শেষটা বেশ কাব্যময় লেগেছে| অনেক অনেক শুভ কামনা|
তানি হক কলেজে থাকতে দুই বান্ধবী ঠিক করেছিলাম, পাশাপাশি বাড়ীতে থাকলেও আমরা মাসে একটি করে চিঠি লিখবো, যেখানে নিজেদের না-বলা কথাগুলো থাকবে।.....দিদি সত্যি পারমিতা ..আর মানসীর মত সত্যিকারের বন্ধু মেলা ভার ..খুব ভালো লাগলো আপনার এবারের এই (মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট) এবারের অন্য গল্প গুলোর চেয়ে আলাদা ..//বাবার বর্তমান বয়স ৮৫ বছর। এখনও বুক চিতিয়ে হাঁটেন, বাইরে বের হওয়ার সময় হাতে লাঠি নিতে বললে হুংকার দেন, বলেন, আমি হইলাম রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের দেশের লোক। সারাটা জীবন কারো উপর নির্ভর কর্রিনি, এখন শেষ বয়সে এসে একটা লাঠির উপর ভর দিতে হবে আমাকে! আমার জীবন তো শেষ করে এনেছি, আর কী! লাঠির উপর ভর দিয়ে হাঁটার আগেই আমি টুপ করে চোখ বুজে ফেলবো”। // আবেগী আর ভালবাসাময় ...শুভেচ্ছা আর ধন্যবাদ দিদিকে
ভালো লাগেনি ২১ ডিসেম্বর, ২০১২
তানি, কতদিন পরে এলে, একটু বসো, তোমায় অনেক কথা বলার ছিল, যদি শোন। এবারের লেখাটি অন্যরকম হয়েছে, তোমার কাছ থেকে এ মন্তব্যটি পেয়ে খুব ভালো লাগছে। 'মুক্তিযোদ্ধা' বিষয়টি তো আর দশটি সাধারণ ডাল-ভাতে ব্যাপার নয়, এ বিষয়ে যেভাবেই লিখতে যাওয়া, তার থেকে সৌরভ বের হয়ে আসবে। তোমাকে আমার ভালোবাসা।
ভালো লাগেনি ২১ ডিসেম্বর, ২০১২
ওয়াছিম অনেক দিন পর গল্পকবিতার একটা গল্প পড়লাম । গল্পটি পড়ে খুব ভাল লাগলো। খুবই ভাল একটা গল্প। ধন্যবাদ লেখিকাকে সুন্দর একটা গল্প লেখার জন্য।
ভালো লাগেনি ২১ ডিসেম্বর, ২০১২
অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ ওয়াছিম। মাঝে মাঝে এমন ধরণের মন্তব্য লেখককে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়! আমি সামনে এগোতে চাই, আপনাদের সহযোগীতা চাই।
ভালো লাগেনি ২১ ডিসেম্বর, ২০১২
আবু এম ইউসুফ এটা কোন কল্পিত বাস্তব নয় এও বাস্তব। আর এই বাস্তবতার আধারেই দাঁড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমৃদ্ধ গর্বিত বাংলাদেশ। অসাধারণ লেখা। খুব ভাল লাগল। নিরন্তর শুভেচ্ছা ।
নিভৃতে স্বপ্নচারী (পিটল) খুব ভালো লাগলো আপনার গল্পটি।শুভ কামনা রইলো।
ভালো লাগেনি ১৭ ডিসেম্বর, ২০১২
যে নিভৃতে স্বপ্নচারণ করে, তার নজরে আমার এই ক্ষুদ্র লেখাটি কী করে এলো!!!!!!!! আমি কী খুশী না হয়ে পারি!!!!!!!!! মজা করলাম পিটল, অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য!
ভালো লাগেনি ১৭ ডিসেম্বর, ২০১২
সূর্য একটা নিপীড়ন, নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের মুক্ত করে দিয়েছেন। এখন সময় মননে চিন্তায় মুক্ত হওয়া। এটাই এখন খুব প্রয়োজন।"যতই পোলাও-কোর্মা দিয়ে প্লেট সাজিয়ে খেতে বসো, তোমার আশপাশে যদি কাউকে লোভার্ত চোখে তোমার প্লেটের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখো, সেই সুস্বাদু পোলাও কোর্মা তোমার কাছে বিষবৎ মনে হবে। তার চেয়ে সকলকে সাথে নিয়ে ডাল-ভাত খেয়ো, অনেক আনন্দ পাবে। " এমন চিন্তায়ইতো যুদ্ধটা হয়েছিল। আজ এ স্বপ্ন অনেক দূরে ঠেলে দিয়েছি। আর স্বাধিনতাকে ব্যবহার করছি যা ইচ্ছে করার, বলার হিসেবে। আপনি চরিত্রগুলো বড় দরদ দিয়ে ফুটিয়ে তোলেন এটাই আপনার বিশেষত্ব। ভাল লাগলো খুব।
ভালো লাগেনি ১৬ ডিসেম্বর, ২০১২
অনেক ধন্যবাদ সূর্য্য, আমি যখনই লিখি, প্রতিটি চরিত্র আমার কাছে অতি প্রিয়জন হয়ে উপস্থিত হয়, তাই মনে হয় কিছু দরদ প্রকাশ পেয়ে যায়। ভালো থেকো সূর্য্য, মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগলো।
ভালো লাগেনি ১৭ ডিসেম্বর, ২০১২
আহমেদ সাবের আপনার লেখার আন্তরিক ষ্টাইলটা আমার খুব ভালো লাগে। আপনি মুক্তিযোদ্ধার যে সংজ্ঞা দিয়েছেন, তার সাথে সম্পূর্ণ একমত। জন্মে নয়, কর্মেই মানুষের পরিচয়। বেশ ভালো লেগেছে লেখাটা। ভালো থাকবেন।
ভালো লাগেনি ১৬ ডিসেম্বর, ২০১২
সাবের ভাই, আপনার কাছ থেকে এমন একটি মন্তব্য পেলাম, আমার লেখায় আমার নিজস্ব স্টাইল আপনি আলাদা করে খুঁজে পেয়েছেন, আমি কিন্তু আবেগাপ্লুত হলাম। অনেক ধন্যবাদ সাবের ভাই।
ভালো লাগেনি ১৭ ডিসেম্বর, ২০১২
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি বাবার বর্তমান বয়স ৮৫ বছর। এখনও বুক চিতিয়ে হাঁটেন, বাইরে বের হওয়ার সময় হাতে লাঠি নিতে বললে হুংকার দেন, বলেন, আমি হইলাম রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের দেশের লোক। সারাটা জীবন কারো উপর নির্ভর কর্রিনি, এখন শেষ বয়সে এসে একটা লাঠির উপর ভর দিতে হবে আমাকে!.......মিঠুদি জমাটবাধা কাহিনী বিন্যাসে সুন্দর করে কতা বলা আপনার নিজস্ব ধারা সে দিক থেকে আপনি অনন্য....আর গল্পের থিমটা এত প্রঞ্জ্বল যে হিমেল বাতাসের মতো গায়ে শিহরন জাগায়....উল্লেখিত লাইন কটি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবলের প্রতিক হিসেবে মনে করি......ভীষণ ভাল লাগলো ভীষণ.......আপনাকে ধন্যবাদ...........
ভালো লাগেনি ১৫ ডিসেম্বর, ২০১২
আমার প্রিয় জ্যোতিদাদা, তোমার মন্তব্যটিও আমার ভীষণ ভালো লাগলো ভীষণ, ভালো থেকো।
ভালো লাগেনি ১৭ ডিসেম্বর, ২০১২
মোঃ সাইফুল্লাহ বেশ।ভাল লাগল//
ভালো লাগেনি ১৩ ডিসেম্বর, ২০১২
অনেক ধন্যবাদ, গল্পটি পড়েছেন!
ভালো লাগেনি ১৩ ডিসেম্বর, ২০১২

১৯ জানুয়ারী - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৬৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "নগ্নতা”
কবিতার বিষয় "নগ্নতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ মে,২০২৪